একইসাথে বেড়ে ওঠা তাদের। ছোটবেলায় খেলাধুলা থেকে শুরু করে পড়াশোনা একইসাথে চলতো। এমনকি পরনের জামাকাপড়ও মিলেমিশে কিনতেন; পড়তেন ২ ভাই। ২জনই একইসাথে উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন জীবিকার টানে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! মাত্র স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একইসাথেই মৃ*ত্যু হয় দুই ভাইয়ের। তাদের কফিনবন্দি মরদেহ একে একে আনা হয়েছে দেশের মাটিতে।

সর্বশেষ শনিবার (৪ অক্টোবর) দুজনের মধ্যে ছোট ভাই আমিনুরের লা*শ আনা হয় দেশে। এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর বড় ভাই নজরুলের ম*রদেহ আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

হতভাগা ওই দুই ভাইয়ের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ২ নম্বর জামুর্কি ইউনিয়নের কদিমধল্যা গ্রামে। তারা ওই গ্রামের খবির উদ্দিনের ছেলে। মাত্র ২৮ দিনের ব্যবধানে প্রবাসে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে এলাকায় চলছে শোকের মাতম। নির্বাক-দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

স্থানীয়রা জানান, কদিমধল্যা গ্রামের খবির উদ্দিনের দুই ছেলে নজরুল এবং আমিনুর। তাদের মধ্যে নজরুল বড় এবং আমিনুর ছোট। দুই জনের মধ্যে অনেক মিল থাকায় এক সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা, ঘুমানো, খেলাধুলাসহ সব কাজকর্ম একসঙ্গেই করতেন। গত চার বছর আগে জীবিকার টানে ভিটেমাটি বিক্রি ও ধারদেনা করে নজরুল পাড়ি দেন সৌদি আরবে। কিছুদিন পর ছোট ভাই আমিনুরকেও নিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকে কাজ করার সময় স্ট্রো*কজনিত কারণে নজরুলের মৃ*ত্যু হয়। তার মৃ*ত্যু খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন নজরুল। ক’দিন পর স্ট্রো*কজনিত কারণে তারও মৃ*ত্যু হয়। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রবাসীদের সহযোগিতায় নজরুলের ম*রদেহ আনা হয় দেশে এবং ৪ অক্টোবর আনা হয় আমিনুরের ম*রদেহ।

জামুর্কি ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মো. সাজন মিয়া জানান, মাত্র একমাসের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। পারিবারিক ক*বরস্থানে তাদের দা*ফন করা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছেন প্রবাসীরা। কিন্তু সৌদি আরবের কোম্পানি, সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এই অসহায় পরিবারটিকে কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।

নজরুল ও আমিনুরের বৃদ্ধ বাবা খবির উদ্দিন বলেন, দুই ছেলেকে হারিয়ে আমি এখন পাগলের মত জীবনযাপন করছি। অভাব অনটনের সংসারে বড় ছেলে নজরুলের স্ত্রী ও সন্তান এবং ছোট ছেলে আমিনুরের স্ত্রী ও দুই সন্তানের এখন কি হবে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। সৌদি আরবের সরকার, বাংলাদেশ ও সৌদি দূতাবাস, বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অসহায় এই পরিবার দুটিকে সাহায্যের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

২ নম্বর জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এ মতিন বলেন, দরিদ্র পরিবারের দুই ভাই একসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই ম*র্মান্তিক ও বে*দনাদায়ক। দুই ভাইয়ের মৃ*ত্যু হলেও সৌদি সরকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারসহ দূতাবাস থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। তবে ইউপি পরিষদ থেকে তাদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, জামুর্কি ইউনিয়নের কদিমধল্যা গ্রামের দুই ভাই সৌদি আরবে মা*রা গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে জানতে পেরেছি। দুই ভাইয়ের এক সঙ্গে মৃ*ত্যুর বিষয়টি খুবই ম*র্মান্তিক ও দুঃখজনক। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অনুদান পাওয়া গেলে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। সূত্রঃ ইত্তেফাক

মোটিভেশনাল উক্তি 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *