দুবাই গেছেন ১০, ২২, ২৬ এবং ৩৭ বার। কারও আছে সোনায় মোড়ানো সাততলা বাড়ি। এলাকার লোকজন বলে ‘গোল্ডেন (স্বর্ণ) বাড়ি’। কারও বাড়ি দশতলা। কারও বাড়ি পাঁচতলা। হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা এমন তিন স্বর্ণ চোরাকারবারির খোঁজ পেয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সঙ্গে তাদের সহযোগীদের তথ্যও পাওয়া গেছে।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার বিপরীতে একটি বাড়ির মালিক মো. সাইফুদ্দিন। মোহাম্মদ নগর হাউজিংয়ে এটি ছাড়া পাঁচ কাঠা জমির ওপর হাল্কা সোনালি রঙের আরেকটি বাড়ি রয়েছে তাঁর।

নগরের মধ্যম রামপুরা বৌবাজারে আট গণ্ডা জমির ওপর ১০ তলা বাড়ি তৈরি করছেন দুই ভাই জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি চারদিক থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এ বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা। এটি ছাড়াও রামপুরা আবাসিকে জাহাঙ্গীর ভবন নামে তাদের পাঁচতলা আরেকটি ভবন রয়েছে। সেটির বাজারমূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা।

‘সাইফুদ্দিনের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তার দুই ভাই মধ্যপ্রাচ্যে থাকে। দুবাই ও ওমান থেকে স্বর্ণবার চোরাচালান করে সে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। বায়েজিদে এক আবাসিকে তার দুটি গোল্ডেন বাড়ি রয়েছে।’

‘স্বর্ণ চোরাচালানের অন্য একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দুই মাফিয়ার খোঁজ পেয়েছি। তারা রিয়াজউদ্দিন বাজারে মোবাইল অ্যাক্সেসরিজের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণবার চোরাচালান করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত নই। মোবাইল এক্সেসরিজ ব্যবসা করে সম্পদের মালিক হয়েছি। ষড়যন্ত্র করে আমাদের দুই ভাইকে চোরাচালানকারী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বহুবার দুবাই আসা-যাওয়া করতে হয়েছে।’

প্রকাশ্যে ব্যবসা, আড়ালে চোরাচালান

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্যারামাউন্ট সিটি মার্কেটের চতুর্থ তলায় সানজিদা ইলেকট্রনিক্স। এখানে মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ব্যবসার আড়ালে জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর করেন স্বর্ণবার চোরাচালান। দুবাই ও চট্টগ্রামে দুই ভাই গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। দুবাইয়ে তাদের কসমেটিক্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর বছরের বেশির ভাগ সময় দুবাই থাকায় এটি পরিচালনা করতেন আরেক ভাই মোবারক আজম। একই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রা পাচার ও চোরাচালান করা হতো।

প্যারামাউন্ট সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নওশাদ আলম বলেন, ‘মার্কেটের ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের চিনতাম। ৭-৮ বছর ধরে ব্যবসা করলেও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত, তা জানতাম না। সিআইডি থেকে বিষয়টি শুনেছি।’

তারা ওড়েন আকাশে

জাহাঙ্গীর তিন বছরে দুবাই-বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেছেন ২৬ বার। এ হিসাবে তিন বছরে ১০ লাখ টাকার উড়োজাহাজ ভাড়া দিয়েছেন তিনি। সায়েমগীর তিন বছরে আসা-যাওয়া করেছেন ১০ বার। বিমান ভাড়া ব্যয় করেছেন ৪ লাখ টাকা। তাদের সিন্ডিকেটের সদস্য মিজানুর রহমান তিন বছরে ২২ বার এবং সোহেল পাঁচ বছরে ৩৭ বার দুবাই-বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেছেন।

২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর ২ কোটি ৯১ লাখ ১৩ হাজার টাকার ২৬ পিস স্বর্ণবার, ৩ পিস স্বর্ণপিণ্ড, ৬ পিস স্বর্ণপাতসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে দুবাই থেকে দেশে আসেন সোহেল। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পার হওয়ার সময় ধরা পড়েন।

ধনী হতে স্বর্ণ চোরাচালান শুরু করেন সাইফুদ্দিন

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মো. সাইফুদ্দিনের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। রাতারাতি ধনী হতে স্বর্ণবার চোরাচালানের পথ বেছে নেন। ২০১৭ সালে কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার ৬০ পিস স্বর্ণবার জব্দ করা হয়।

মোটিভেশনাল উক্তি 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *