বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে রয়েছে সোনার মজুদ। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। এছাড়া বড় বড় সোনার খনি বিশ্বের যেসব দেশের কাছে রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, গণপ্রজাতান্ত্রিক অব কঙ্গো এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পাপুয়া নিউগিনি।

গত ২০ বছরের মধ্যে দুবাই হয়েছে উঠেছে সোনার বৈধ-অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়ের অন্যতম হাব। কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সোনা ক্রয়-বিক্রয়ের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে তা নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।

যারা বিভিন্ন উপায়ে সোনা লুট করে ব্যাপক প্রভাবশালী বনে গেছেন। সোনা লুট কারীরা একাধিক চরিত্রে কাজ করে থাকেন। যার মধ্যে রয়েছে কূটনেতিক থেকে শুরু করে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের ভাতিজি।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এই গোষ্ঠীটি ব্যাপকভাবে সোনা চোরাচালান করে। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ২০২৩ সালে এ নিয়ে দীর্ঘ এক অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

কেনিয়ার বংশোদ্ভূত পাটনি কীভাবে কোটি কোটি মূল্যের সোনা পাচার করতে হয় এবং তা নিয়ে কীভাবে পালিয়ে যেতে হয় তা অন্য সবার চেয়ে ভালো জানেন। ১৯৯০ সালে তার প্রতিষ্ঠান গোল্ডেনফার্ম ইন্টারন্যাশনাল বিশাল এক কেলেঙ্কারিতে জড়ায়। ওই সময়ে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের সোনা ডাকাতির অভিযোগ ওঠে। যা দেশটির জিডিপির ১০ শতাংশের সমান।

আল জাজিরার তদন্তে বেরিয়ে আসে, পাটনি এখন তার কার্যক্রম দুবাই বসে পরিচালনা করছেন। সেখানে বসেই তিনি আফ্রিকার সব দেশ থেকে সোনা পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ে থেকে বেশি সোনা পাচার করেন। তিনি তার দ্রুত উত্থানের জন্য গর্ব করেছিলেন।

উয়েবার্ট অ্যাঞ্জেল জিম্বাবুয়ের একজন অন্যতম প্রভাবশালী কূটনীতিবিদ। ২০২১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনানগাগওয়াকে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে একজন বিশেষ প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করেন। তার কাজ ছিল জিম্বাবুয়ের ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা। এই কূটনীতিক বিশ্বাস করতেন, দেশে কীভাবে অর্থ ঢুকবে তা বিবেচ্য বিষয় নয়।

এই কূটনীতিক আল জাজিরাকে বলেন, তিনি তার কূটনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে জিম্বাবুয়েতে ব্যাপক কালো টাকা প্রবেশ করিয়েছেন। বিষয়টি প্রেসিডেন্টও জানতেন।

তিনি সাধারণরত খুবই ভদ্র ভাষায় কথা বলেছিলেন। এই ব্যক্তি জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনানগাগওয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এছাড়া তিনি একটি গির্জার মিউজিসিয়ান এবং ধর্মযাজন ছিলেন। এছাড়া নিযেকে ঐশ্বরিক বিষয়ের সুসংবাদদাতা হিসেবে উপস্থাপন করতেন। জিম্বাবুয়ের থেকে অবৈধভাবে সোনা ক্রয় করে তিনি সেগুলোকে দুবাইয়ে পাচার করতেন। এর মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ আয় করতেন।

হেনরিয়েটা রুশওয়ায়া
জিম্বাবুয়েল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হলেন হেনরিয়েটা রুশওয়ায়া। এছাড়া তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টের ভাগিনি। অবৈধভাবে সোনা ক্রয়ের সময় দুলান এবং অ্যাঞ্জেল রুশওয়ায়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সোনা চোরাচালানকারীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এটাই তার প্রথম ঘটনা নয়। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ে থেকে দুবাইতে ৬ কেজি সোনা পাঠানোর সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার সাবেক একজন গাড়ি চালক ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার মূল্যের সোনা দুবাই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

গত ২০ বছরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই সোনা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি বাণিজ্যিক হাবে পরিণত হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সোনা আমদানিতে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় কাতারে রয়েছে। প্রথমে রয়েছে ভারত।

জাতিসংঘের মতে, দুবাইতে যখন বিশ্বের লাখ লাখ পর্যটকের আগমণ হচ্ছে। তারই মাঝে এই দেশটি অর্থ পাচার এবং সোনা চোরাচালানে অন্যন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। দেশটিতে অনেকেই তাদের কালো টাকা, সোনা চোরাচালান এবং অর্থ পাচার করে থাকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার একটি চক্র বিভিন্ন উপায়ে দুবাইতে সোনা পাচার করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা দেশটির নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা করে না। কারণ কয়েক বছর ধরে দুবাই বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছে। অনেকে বিদেশি দেশটিতে বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কারণ এখানে রয়েছে নানান সুযোগ সুবিধা।

চলতি বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপক সোনা পাচার হয়। এক্ষেত্রে দেশটি শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে।

ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টন সোনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করা হয়। এর বাজার মূল্য ১১৫ বিলিয়ন ডলার।

সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *