সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শহরটিতে গ্লোবাল হাই নিট ওয়েলথ ইন্ডিভিজুয়ালস (এইচএনডব্লিউআই) হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরা সম্পত্তি কিনতে খরচ করবেন ৪৪০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের চেয়ে চলতি বছরে তাদের সম্পত্তি কেনার হার হবে ৭৬ শতাংশ বেশি।

বৈশ্বিক প্রপার্টি খাতের প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্র্যাঙ্কের নতুন এ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরে গলফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) অঞ্চলের অতিধনীরা দুবাইয়ে বাড়ি কেনার জন্য গড়ে ৩১ লাখ ডলার খরচ করবেন। অন্যদিকে বৈশ্বিক অতিধনীরা গড় চুক্তিতে খরচ করবেন ৩ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।

মূলত বিনিয়োগ, ব্যবসা, ভিসা ও অর্থ স্থানান্তরের সুবিধার জন্য অঞ্চলটি ধনীদের বসবাসের জন্য গুরুত্ব পাচ্ছে। এ জরিপে ৩১৭ জন সম্পদশালী ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলের ব্যক্তিদের গড় নিট সম্পদের পরিমাণ ৮০ লাখ ডলার ও বৈশ্বিক ধনীদের ক্ষেত্রে তা ২ কোটি ডলার।

নাইট ফ্রাঙ্কের অংশীদার ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণা প্রধান ফয়সাল দুররানি বলেন, ‘ধনীদের মাঝে দুবাইতে বিনিয়োগের আগ্রহ এখনো খুব বেশি। ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের দুবাইতে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়ে যায়। ২০-৫০ লাখ ডলার নিট সম্পদ আছে এমন ২৮ শতাংশ ও দেড় কোটি ডলারের বেশি নিট সম্পদ রয়েছে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এ আগ্রহ দেখিয়েছেন।’

অতিধনীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুবাইয়ের অভিজাত এলাকাগুলো—দুবাই মেরিনা, ডাউনটাউন দুবাই, বিজনেস বে, দুবাই সাউথ/এক্সপো সিটি, দুবাই ক্যানাল, দুবাই হিলস এস্টেট, পাম জুমেইরাহ ও জুমেইরাহ বে দ্বীপ। অনেকেই বিনিয়োগ বা মূলধন হিসেবে দুবাইতে একটি সম্পত্তি কেনার পরিকল্পনা করেছেন। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় একটি বাড়ি বা ভাড়া দেয়াও যায় এমন হলিডে হোম কিনতে চান তারা।

জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বের হয়ে আসতে আবাসন ও বিনোদনসহ বিভিন্ন খাতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ইউএই সরকার। এ কারণে সুবিধাগুলো ক্রমেই সম্প্রসারণ হচ্ছে। এরই মধ্যে কর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত শহরগুলো হয়ে উঠেছে বিভিন্ন দেশের অবৈধ অর্থের নিরাপদ গন্তব্য। অতিধনী ছাড়াও দক্ষ পেশাজীবী ও অভিজ্ঞদের গোল্ডেন ভিসা সুবিধাও দিচ্ছে ইউএই। পাশাপাশি কৌশলগত কারণে বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে দুবাই, আবুধাবি ও শারজা।

দুবাইয়ের প্রপার্টি বাজার গত বছর ১ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের বাড়ি বিক্রি করে রেকর্ড করেছে। এ খাতে ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ৭৬০ কোটি ডলার লেনদেন হয়েছে। নাইট ফ্র্যাঙ্কের প্রতিবেদন অনুসারে, এক্ষেত্রে লন্ডন ও নিউইয়র্কের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে দুবাই। দুবাইয়ে ১ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের বাড়ি বেড়েছে ২৬ শতাংশ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আরব আমিরাতে অভিজাত বাসস্থানের জন্য বিদেশীদের চাহিদা বৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডের গবেষণা ও পরামর্শ বিভাগের প্রধান প্রতুষা গুরাপ্পু জানান, দুবাইয়ের কোটি ডলারের সম্পত্তির চাহিদা বৃদ্ধির অন্য একটি দিক রয়েছে। এর মাধ্যমে আরব আমিরাতে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিলিয়নেয়ার বাসিন্দাদের স্থানান্তরের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।

নাইট ফ্র্যাঙ্কের জরিপে দেখা যায়, ২ কোটি ডলার নিট সম্পদ রয়েছে এমন ২৫ শতাংশ অতিধনী দুবাইয়ে একক সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ৬-৮ কোটি ডলার খরচের পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে ১৮ শতাংশের পরিকল্পনায় রয়েছে ৪-৬ কোটি ডলার খরচের।

দুবাইয়ের প্রতি অতিধনীদের এ আগ্রহ লুফে নিয়েছেন অঞ্চলটির প্রপার্টি খাতের উদ্যোক্তারা। দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমার প্রপার্টিজ সম্প্রতি আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে। হাইটস কান্ট্রি ক্লাব অ্যান্ড ওয়েলনেসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভবন ও ভিলাকেন্দ্রিক নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে দুবাইয়ের পাশাপাশি অতিধনীদের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে ইউএইর রাজধানী আবুধাবি। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরে এখানে ৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সম্পত্তি বিক্রি হবে। এর মধ্যে বৈশ্বিক অতিধনীরা গড়ে খরচ করবেন ৩৪ লাখ ডলার ও জিসিসিভুক্তরা করবেন ৯ লাখ ডলার।

সূত্রঃদ্য ন্যাশনাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *