নিষিদ্ধ জিনিসের কৌতূহলই পৃথিবীর দুর্গম স্থানগুলোতে অভিযানে মানুষকে উৎসাহিত করেছে।তারপরও এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায় অবস্থিত ‘এরিয়া ৫১’ সামরিক ঘাঁটি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় জায়গা। সেখানে কী হয়, তা আজ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত করে বলেনি। ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত মার্কিন সরকার এই জায়গাটির অস্তিত্ব স্বীকারই করেনি।
মার্কিন সেনাবাহিনীর ১৯৯২ সালের কিছু নথি ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় এবং তখন এই সেনা ঘাঁটির কথা স্বীকার করা হয়। তারপরও এরিয়া ৫১ এ কী ধরণের কাজ বা গবেষণা হয়, তা মার্কিন সরকার নিশ্চিত করেনি।টি মার্কিন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চর্চিত এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে গোপন ঘাঁটি।
বলা হয়, মার্কিন সেনাবাহিনী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতারা যখন এই সেনাঘাঁটিতে যান, তখনও উড়োজাহাজ অবতরণের সময় জানালা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বাইরের কিছু দেখা না যায়।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের বক্তৃতায় এরিয়া ৫১ এর নাম উল্লেখ করেন বারাক ওবামা।
হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্সের মতো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরাও তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় অঙ্গীকার করেছিলেন, নির্বাচিত হলে তারা এরিয়া ৫১ এর রহস্য উৎঘাটন করবেন।
স্নেক আইল্যান্ড, ব্রাজিল
ব্রাজিলের ইলহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডে দ্বীপকে স্নেক আইল্যান্ড বা সর্পদ্বীপ বলা হয়। কারণ, এটি প্রাণঘাতী সাপের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।
গোল্ডেন ল্যান্সহেড ভাইপার এতই বিষাক্ত যে এটি কামড়ালে আশেপাশের মাংস পর্যন্ত গলে যায়। বলা হয়, স্নেক আইল্যান্ডের কিছু জায়গায় প্রতি বর্গমিটারে একটি করে সাপ আছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্রাজিল সরকার দ্বীপটিতে যেতে কোনো পর্যটককে অনুমতি দেয় না।
এমনকি, গবেষণার কাজে কেউ সেখানে গেলেও সঙ্গে একজন চিকিৎসক রাখা বাধ্যতামূলক।
লেসকো গুহা, ফ্রান্স
১৯৪০ সালে ফ্রান্সের লেসকো গুহায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়া যায় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটি একটি পর্যটন স্থানে পরিণত হয়।
দর্শনার্থীদের নিঃশ্বাস থেকে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইডের কারণে গুহাচিত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ফলে, গুহাটিতে ১৯৬৩ সালে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
এটি এখন ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। আসল গুহাটি বন্ধ হলেও দর্শনার্থীদের জন্য অনুরূপ কৃত্রিম গুহা চালু করা হয়েছে। তবে, গবেষক ও সংরক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ এখনো আসল গুহাটিতে প্রবেশ করতে পারেন।
উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ, ভারত
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ উত্তর সেন্টিনেল। এই দ্বীপ সম্পর্কে মানুষের কেবল ধারণাই রয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
ধারণা করা হয়, এই দ্বীপের বাসিন্দারা ৬০ হাজার বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে। তারা পুরো পৃথিবী থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
২০০৬ সালে ২ জেলে নৌকাডুবির কবলে পড়ে দ্বীপটিতে আশ্রয় নেয়। পরে দ্বীপের অধিবাসীরা তাদেরকে হত্যা করে। ওই দ্বীপের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার যাওয়ার সময়ও দ্বীপের বাসিন্দারা তীর ছুঁড়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
ভারত সরকার সেখানে বসবাসকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই সফল হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই দ্বীপটিতে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইউক্রেনের চেরনোবিলের কাছে (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত) একটি বিস্ফোরণ ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত পারমাণবিক দুর্ঘটনা।
বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন, চেরনোবিল বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট বিকিরণের কারণে ক্যানসারে ৯ হাজার থেকে ১০ লাখ মানুষ মারা যাবে। এই ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে ৩০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বিকিরণ বন্ধ করার প্রকল্পগুলো এখনো চলমান।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুসারে, অন্তত ২০ হাজার বছর এই অঞ্চলটি বসবাসের অযোগ্য থাকবে।
নরওয়ে এবং উত্তর মেরুর মাঝামাঝিতে অবস্থিত এই সীড ভল্টকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফ্রিজার বলা হয়। এই বিশাল শস্যাধারটিকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এটি অক্ষত থাকে।
পৃথিবীতে যদি কোনো ভয়াবহ দুর্যোগের ঘটনাও ঘটে, তবুও এখানে রক্ষিত ৮ লাখ ৯০ হাজার বীজ সুরক্ষিত থাকবে এবং দুর্যোগ পরবর্তী খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশের শস্যবীজ সংরক্ষিত আছে এই ভল্টে। প্রতি বছর মাত্র কয়েকবার এই ভল্টের দরজা খোলা হয়। ভল্টে সীমিতসংখ্যক মানুষের প্রবেশাধিকার আছে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট