আমিরাতের অর্থনীতিতে কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাত অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আয়ও। ২০২৩ সালে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

ইউএইর ফেডারেল কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস সেন্টারের প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে স্থির মূল্যে দেশটির জিডিপি ১ দশমিক ৬৮ ট্রিলিয়ন দিরহাম বা ৪৫ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। বর্তমান মূল্যে জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৫১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন দিরহামে, যা প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ বার্ষিক সম্প্রসারণের প্রতিনিধিত্ব করে।

গত বছর ইউএইর জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাত ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন দিরহামে পৌঁছেছে। একই সময়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাত ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।

২০২৩ সালে আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে দ্রুতবর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আর্থিক পরিষেবা খাত। ২০২২ সালে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধির পর গত বছর খাতটি প্রসারণ হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর্থিক পরিষেবা খাতের পর দ্রুতবর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবহন ও লজিস্টিক, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট পরিষেবা খাত।

এ বিষয়ে ব্যাংকিং সংস্থা এমিরেটস এনবিডির গবেষণাপ্রধান ও প্রধান অর্থনীতিবিদ খাতিজা হক বলেন, ‘২০২৩ সালে উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুর্বল ছিল।এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল ছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করছি চলতি বছর ও পরবর্তী সময়ে পরিবহন ও অবকাঠামোসহ পাবলিক সেক্টরে বিনিয়োগ শক্তিশালী থাকবে। কারণ ইতিহাদ রেল নেটওয়ার্ক ও আল মাকতুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণসহ বেশ কয়েকটি বড় দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ঘোষণা করেছে সরকার।’

দুবাইভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি তেলবহির্ভূত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস আগের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে সংশোধন করে ৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। পাশাপাশি দেশটির হেডলাইন জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করেছে।

এমিরেটস এনবিডি জানিয়েছে, ওপেক প্লাস চলতি বছর উৎপাদন কমানোর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন কম থাকবে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী জোটটি বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন ২২ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত উত্তোলন কমাতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মন্তব্য। ওপেক প্লাস বর্তমানে প্রতিদিন ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করে, যা বিশ্বব্যাপী চাহিদার প্রায় ৬ শতাংশের সমান।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, ইউএইর সামগ্রিক জিডিপি চলতি বছর ৪ শতাংশ প্রসারণ হবে, যা এপ্রিলে পূর্বাভাস দেয়া ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেশি।

আইএমএফ বলেছে, আমিরাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে রয়েছে পর্যটন, নির্মাণ, উৎপাদন ও আর্থিক পরিষেবা খাতের শক্তিশালী কার্যকলাপ।

অপারেশন ৩০০ বিলিয়নসহ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর মাধ্যমে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২০২১ সালে ১৩ হাজার ৩০০ কোটি থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার কোটি দিরহামে বাড়াতে চায় কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে দেশটিকে একটি শিল্প কেন্দ্র হিসেবে স্থাপন করতে চায় তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *