জেলেপাড়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা। অন্যদিকে দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও তা পূরণ করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, পদ্মা-মেঘনা থেকে ধরে আনা ইলিশ বিক্রি করতে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে মৎস্য আড়তে ভিড়ছে জেলে নৌকা। সেখান থেকে ঝুপড়িতে করে আড়তে স্তূপ করছেন শ্রমিকরা। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের হাঁকডাকে পুরোদমে সরগরম ইলিশ ঘাট। পাইকারি ক্রেতার পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাও এখন ভিড় জমাচ্ছেন এই আড়তে।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত থাকে এ ইলিশের ঘাট। মা ইলিশ ডিম ছাড়ার লক্ষে অক্টোবর মাসে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। যার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতারা ভিড় করছে ইলিশ ঘাটে। গত একমাস আগে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ ছিল দেড়শ থেকে দুইশ মণ। তখনকার বাজারে এককেজী ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৫ টাকায়। একমাস পর এসে ইলিশের সরবরাহ আরো ৩০০ থেকে ৪০০ মণ বেড়েছে। এখন মাছঘাটে সেই অনুপাতে ইলিশ বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি কিন্তু বিক্রির দাম তার উল্টো চিত্র। এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।

পদ্মা-মেঘনার জেলে আলমগীর ছৈয়াল, সোলেমান মোতায়ের ও মুসা পাটোয়ারী বলেন, এখন ইলিশ ভরা মৌসুম যাচ্ছে। নদীতে কিছুটা ইলিশ কম পাওয়া গেলেও আড়তে দাম বেশি। আমাদের কাছ থেকে ইলিশ কিনে সেটি নিলামে দাম তুলে আরো বেশি বিক্রি হয়। এরপর কয়েক হাত রদবদল হয়। যর কারণে দামবৃদ্ধি।

চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী ফয়েস ঢালী ও নবীর হোসেন বলেন, মাছঘাটে কয়েকদিন ধরে প্রচুর ক্রেতা আসতেছে। এছাড়া আগের তুলনায় ইলিশ সরবরাহ বেড়েছ কিন্তু দাম কমেনি। দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতন্ডা হয়। মাছের তুলনায় ক্রেতা বেশি, যার কারণে দামও বেশি। বর্তমানে প্রতিকেজি ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এককেজি ওজনের কম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতিদিন সরবরাহের উপর ইলিশ দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে।

চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমার স্বজনদের জন্য ঢাকায় পাঠাতে ৭৮ কেজি ইলিশ কিনেছি। স্থানীয় প্রতিকেজি ইলিশ এখনো ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা। আরও বেশি ইলিশ ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলেও বেশি দামের কারণে কিনতে পারিনি। এখানে আসি ইলিশ কমে কিনার জন্য কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এখানেই ব্যবসায়ী দাম বেশি রাখে। পুরো মাছঘাটে একই দাম।

নরসিংদী থেকে ইলিশ কিনতে আসা এস এম শাহীন বলেন, ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছি কম দামে ইলিশ কিনতে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। ইলিশের দাম অনেক বেশি। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০ টাকা চায়। কি কারণে ইলিশের দাম এত বেশি বুঝতে পারছি না। এখানে সিন্ডিকেট কাজ করে। মানুষ অসহায় তাদের কাছে। এত দাম চায় ইলিশ কিনে খাওয়ার ক্ষমতা সবার হবে না।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। মাঝে মাঝে এক হাজার মণ ইলিশও আসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইলিশ কিনতে আসছেন ক্রেতারা। তবে ইলিশের সরবরাহের কোন ঠিক নেই। হঠাৎ করেই সরবরাহ বাড়ে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো ইলিশ মাছ যাবে না। এছাড়া আমরা কোনো মাংস আমদানি করতে চাচ্ছি না। এখন লাখ লাখ খামারি গবাদিপশু লালন-পালনের সঙ্গে জড়িত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *