এ ঘটনায় বিপাকে পড়া যাত্রীদের আনতে অবশ্য রোববারই ঢাকা থেকে দুবাই উড়ে গেছে বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ।
যাত্রী নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রওনা হওয়ার পর ককপিটের কাচে (উইন্ডশিল্ডে) ফাটল দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট দুবাই ফেরত গেছে।
রোববার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫ মিনিটে দুবাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজটির ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে।
কিন্তু বিজি-০৩৪৮ নম্বরের ফ্লাইটটি ওমানের আকাশে এলে ত্রুটি ধরা পড়লে ২৪৪ জন যাত্রী নিয়ে সেটি আবার দুবাই ফেরত যায়।
আকস্মিক এ ঘটনায় বিপাকে পড়া যাত্রীদের আনতে অবশ্য রোববারই ঢাকা থেকে দুবাই উড়ে গেছে বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ।
বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, “যে ফ্লাইটে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটির যাত্রীদের ফেরত আনতে আজ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে একটি ফ্লাইট দুবাই গেছে। সেটি আনুমানিক বিকাল ৫টা নাগাদ দুবাই পৌঁছাবে এবং রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।”
বিমানের উইন্ডিশিল্ডে ফাটলের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সৌদি আরবের পথে রওনা হওয়ার পর উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেওয়ায় ২ ঘণ্টা বাদে ২৯৭ আরোহী নিয়ে শাহজালাল বিমান বন্দরে ফিরে আসে বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের একটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
গেল জুনেও উইন্ডশিল্ডে ফাটলের কারণে চট্টগ্রাম থেকে আবুধাবি যাওয়ার পথে ঢাকায় জরুরি অবতরণ করে বিমানের একটি ফ্লাইট। বোয়িং ৭৩৭-৭ মডেলের উড়োজাহাজ ছিল সেটি।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ এর ককপিটের কাচ ফেটে গেলে সেটিকে মালয়েশিয়ায় গ্রাউন্ডেড করা হয়। একই বছরের অগাস্টে দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আরেকটি বোয়িং ড্রিমলাইনার মাঝ আকাশে একই সমস্যার মুখোমুখি হলে সেটিকে ভারতের আকাশসীমা থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়।
এদিকে বিমানের দুবাই স্টেশনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাকিয়া সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাইটের যাত্রীরা সবাই নিরাপদে আছেন এবং তাদের জন্য ঢাকা থেকে একটি রেসকিউ (উদ্ধারকারী) ফ্লাইট আসছে।”
এক প্রশ্নে তিনি সমস্যাটিকে ‘আকস্মিক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এয়ারক্রাফটির ফ্রন্ট উইন্ডশিল্ডে ক্র্যাক দেখা দিয়েছিল, তাই ফেরত আসতে হয়েছে।
“এ ধরনের সমস্যা আগে থেকে ট্রেস করা গেলে ফ্লাইট বাতিল করা হতো, সমস্যাটা আকস্মিক।”
বিপাকে যাত্রীরা
এ ঘটনায় ওই উড়োজাহাজের আরোহীরা সময়মতো দেশ না ফিরতে পারায় পড়েছেন বিপাকে। তারা দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই আছেন নতুন ফ্লাইট ধরার অপেক্ষায়।
“এয়ারপোর্টে একটু অসুবিধা তো হচ্ছেই, কিন্তু তা আমরা মেনে নিয়েছি। বিপদ থেকে এখানে নিরাপদে আসছি, এতগুলো মানুষরে আল্লাহ বাঁচিয়ে এনেছে সেটাই শুকরিয়া।”
তবে এ ঘটনায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন ফ্লাইটের আরেক যাত্রী টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সুলতান।
বলেন, “দেশে আসার আগে দুই-চার রাত তো এমনিতেই নানা ঝামেলায় ঘুম হয় না, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া হয় না। তার উপর এই বিপদ!
“দেড় বছর পর বাড়ি যাচ্ছি, এত বেশি টাকা দিয়ে আমরা বিমানের টিকেট কিনি দেশকে ভালোবাসি বলে, কিন্তু সেই তুলনায় ভালো সেবা পাই না।”
ফ্লাইটের আরেক যাত্রী কক্সবাজারের মোহাম্মদ সালাউদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, “গতরাত থেকে না ঘুমিয়ে আছি। আজ (রোববার) সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর ১১টা ৪৫ মিনিটে আমার ঢাকা-কক্সবাজার কানেক্টিং ফ্লাইট ছিল।
“এখন ঢাকা পৌঁছে আমাকে আরও একরাত এয়ারপোর্টে কাটাতে হবে কক্সবাজারের কানেক্টিং ফ্লাইটের জন্য। এই দুর্ভোগ কপালে ছিল তাই বিমানে টিকেট করেছি।”
যাত্রীদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা গেল না কেন, জানতে চাইলে দুবাই স্টেশনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাকিয়া সুলতানা বলেন, “প্রথমত আমরা এত যাত্রীকে একসাথে অ্যাকোমোডেট করার মত হোটেল রুম পাইনি। তাছাড়া ঢাকা থেকে ঠিক কোন সময়ে রেসক্যু ফ্লাইট এসে পৌঁছাবে, সে বিষয়টি আনসারটেইনছিল।