পাহাড়ি উঁচুনিচু জমিতে সারি সারি আমবাগান। গাছে ঝুলে আছে লাল-হলুদ, সিঁদুররাঙা দেশি-বিদেশি জাতের আম। ফলের রাজার এই রাজত্বের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে চেরি টমেটো, মাল্টা, ড্রাগন। রয়েছে বরই, লিচু, জামরুলও।
নানা ফলের এই রাজত্ব খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নতুন পাড়া এলাকায়। এখানে ৫টি পাহাড়ে মূলত আমের বাগান গড়ে তুলেছেন মংসেতু চৌধুরী। প্রায় ৫০০ বিঘা জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই রাজত্ব।
মংসেতু জুমবাংলাকে বলেন, আগে এসব পাহাড়ে জুমচাষ হতো। এতে লাভ কম আসত। ২০০৩ সালে বাবা প্রথমে এসব পাহাড়ে আমের চারা লাগান। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে সেসব জংলি অবস্থায়ই ছিল। তিনি ২০১৪ সালে এটাকে বাগানে রূপ দেন। নাম দেন– মং গ্রীন লাইফ এগ্রো ফার্ম।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া মংসেতু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশেও (বিজিবি) চাকরি করেছেন। পরে বাগানের কাজের পরিধি বাড়ায় তিনি চাকরি থেকে আগেই অবসর নেন। এখন পুরোদমে আত্মনিয়োগ করেছেন এই আমের রাজত্বে। মৌসুমে এই আম থেকেই তাঁর আয় ৫৫ লাখ টাকার বেশি। অন্য ফলেও লাভ হচ্ছে দেদার।
মংসেতু জানান, চলতি মৌসুমে পাইকারি আম বিক্রিতে তাঁর লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ লাখ টাকা। এই ফল নিজে বিক্রি করলে কমপক্ষে ৮০ লাখ পেতেন। অবশ্য তখন শ্রমিক থেকে শুরু করে পরিবহনবাবদ লাখ দশেক টাকা খরচ হতো।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় প্রায় ৬ কিলোমিটার গেলে নতুন পাড়া এলাকা। এখানে নতুন পাড়ায় গড়ে উঠেছে তার আম রাজত্ব– মং গ্রীন লাইফ এগ্রো ফার্ম।
মং জানান, শহর থেকে তাঁর ফার্মে যেতে অটোরিকশায় আধা ঘণ্টা লাগবে। মোটরবাইক বা গাড়িতে আরও কম।
মং গ্রীন এগ্রো লাইফে গেলে দেখা মিলতে পারে বনমোরগেরও। এই মোরগের পিছু নিলে দেখতে পাবেন, সারি সারি গাছে ঝুলছে দেশ-বিদেশের নানা জাতের আম। এর মধ্যে পৃথিবীবিখ্যাত ‘ন্যাম ডক মাই’ জাতও রয়েছে।
এই ফার্মের একটি ফেসবুক পাতা রয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ন্যাম ডক মাই জাতের আম বিশ্বসেরা ১০টির মধ্যে একটি। এই আম কুরিয়ার খরচাসহ পাঠাতে কেজিপ্রতি ৩২০ টাকা করে নেওয়া হয়।
এই ফেসবুক পাতা ঘুরে আরও দেখা যায়, মংয়ের বাগানে ঝুলছে পাহাড়ি লিচু, বরই, জামরুলও। এর ফাঁকে ঝুলছে কমলা, মাল্টা, ড্রাগন থেকে শুরু করে চেরি টমেটো।
মৌসুমে কমলা, মাল্টা, ড্রাগন ইত্যাদি ফল বিক্রি করে তাঁর আরও লাখ পাঁচেক টাকা আয় হয় বলে জানান মং।
মংসেতু বলেন, তিনি থাইল্যান্ডসহ নানা দেশ থেকে বিদেশি ফলের চারা সংগ্রহ করেছেন। তা ছাড়া প্রবাসীদের গড়ে তোলা নানা নার্সারি থেকেও চারা নিয়েছেন। তাঁর বাগানে অন্তত ৫ জন শ্রমিককে নিয়মিত কাজ করতে হয়। মৌসুমভেদে আরও বেশি শ্রমিকও লাগে। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থান করতে পেরে তিনি খুশি।
পাহাড়ে চিরায়ত জুমচাষের পাশাপাশি আরও বাগান গড়ে উঠলে তা আখেরে পাহাড়ি নির্বিশেষে সব বাংলাদেশির জন্যই লাভজনক বলে মনে করেন মংসেতু চৌধুরী।