২০২৪ সাল শেষে দুবাই চেম্বারে নিবন্ধিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৬৮৬ জন। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে দুবাইয়ের আকর্ষণ বাড়ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকারী ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে দুবাই চেম্বার্স আয়োজিত ‘দুবাই-বাংলাদেশ বিজনেস ব্রিফ্রিং’ শীর্ষক দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব তথ্য জানান।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট ডিসিসিআই’র একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দুবাই চেম্বার্সের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী রাশেদ লুতাহ বলেন, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিন্ন উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দুবাই চেম্বার্স কাজ করে যেতে বদ্ধপরিকর। দুবাইতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অধিকতর বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুবাই চেম্বারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা বরাবরের ন্যায় অব্যাহত থাকবে।
তিনি আমিরাতে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউএইতে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় শাখা অফিস স্থাপনের প্রস্তাব করেন, যা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি বিশেষ করে আফ্রিকায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করবে।
মোহাম্মদ আলী রাশেদ লুতাহ বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউএইতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়াও তথ্য-প্রযুুক্তি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশে একটি কার্যকর ডাটা সেন্টার স্থাপন জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক বিনিয়োগ কাঠামো, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল রেগুলেটরি পরিবেশ, শতভাগ বিদেশি মালিকানার সুযোগ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা এবং শক্তিশালী মেধাস্বত্ত সুরক্ষা আইন ইত্যাদি কারণে দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্য।
বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ করে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর লজিস্টিক সেবা খাতে ইউএই’র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ফিনটেক, আর্থিক খাত, স্বাস্থ্য সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, পর্যটন ও মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দুবাইয়ের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
এসময় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার ওপর তথ্য-চিত্র উপস্থাপন করেন। তিনি দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুদেশের বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন একান্ত জরুরি।
তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ডাটা সেন্টার, স্বাস্থ্যসেবা, লজিস্টিক, ফ্যাশন ডিজাইন, ই-কমার্স প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ইউএই-তে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই এবং দুবাই চেম্বার্সের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং দুবাই চেম্বার্সের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী রাশেদ লুতাহ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন।
দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়। এর আওতায় উভয় সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিটুবি ম্যাচ মেকিংয়ের আয়োজন, যৌথ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, বাণিজ্য সভা, মেলা বা প্রদর্শণীর আয়োজন এবং সর্বোপরি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের আদান প্রদানকে গুরুত্ব দেয়া হবে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান এবং বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মোটিভেশনাল উক্তি