এই প্রশ্নের উত্তর যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নয়। এর সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য, আমরা প্রশ্নটিকে চারটি ভিন্ন উপায়ে পুনর্বিন্যাস করব:
কোন দেশে আমরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়? জাপান। পুরো দেশটি একটি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলে অবস্থিত, এবং তাদের বিশ্বের সবচেয়ে ঘন ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক রয়েছে, তাই তারা অনেক ভূমিকম্প রেকর্ড করতে সক্ষম।
কোন দেশে আসলে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়? ইন্দোনেশিয়া একটি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলেও রয়েছে, তবে জাপানের চেয়ে বড় আকারের কারণে, এর মোট ভূমিকম্প বেশি।
প্রতি ইউনিট এলাকায় কোন দেশে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়? এটি সম্ভবত টোঙ্গা, ফিজি বা ইন্দোনেশিয়া হতে পারে কারণ তারা সবই সাবডাকশন জোন বরাবর অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকম্প এলাকায় অবস্থিত। এই অঞ্চলগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভূমিকম্প যন্ত্রের কারণে আমরা আসলে সমস্ত ছোট ভূমিকম্প রেকর্ড করতে পারি না।
কোন দেশে সবচেয়ে বিপর্যয়কর ভূমিকম্প হয়, অথবা কোন দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয়েছে? চীন এবং ইরান উভয়ই ভূমিকম্পগতভাবে সক্রিয় অঞ্চলে রয়েছে, তাদের খুব দীর্ঘ ঐতিহাসিক রেকর্ড রয়েছে এবং অনেক বিপর্যয়কর ভূমিকম্প হয়েছে। এই বিভাগে তুরস্কও উল্লেখ করার মতো।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশের অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চল—‘রিং অফ ফায়ার’-এ অবস্থান করায় দেশটি সবসময়ই টেকটোনিক কার্যকলাপ ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় জাপান উন্নত প্রযুক্তি ও সিসমিক মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা ক্ষুদ্রতম ভূমিকম্পও শনাক্ত করতে সক্ষম। পুরো দেশজুড়ে কৌশলগতভাবে স্থাপন করা হয়েছে এক হাজারের বেশি সিসমোমিটার। গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ভূমিকম্পই ছোট, যা সাধারণ মানুষ টেরও পায় না। তবে মাঝে মাঝে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়। জাপানে দেশব্যাপী একটি সতর্কতা ব্যবস্থা চালু আছে, যা বাসিন্দাদের আগাম তথ্য দিয়ে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। প্রায় প্রতি বছরই ৬ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প দেশটিতে আঘাত হানে। ২০১৮ সালে ৬ এর ওপরে নয়টি ভূমিকম্পে হাজারও মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অব ফায়ারের ওপর অবস্থানের কারণে দেশটি ভূমিকম্পের পাশাপাশি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, খরা, বন্যা ও সুনামির ঝুঁকিতেও রয়েছে।
চীনে ভূমিকম্পের ইতিহাস দীর্ঘ এবং ভয়াবহ। অতীতে বহু ভূমিকম্প হাজার হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে। ২০০৮ সালে সিচুয়ান প্রদেশে আঘাত হানা ৭.৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় বা নিখোঁজ হন। দেশটি একাধিক সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থান করায় ক্রমাগত ভূত্বকে চাপ সৃষ্টি হয়, যা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ায়। চীনের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি করে, যা পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোকেও ভূমিকম্পে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারের ধার ঘেঁষে অবস্থান করায় ফিলিপাইনও বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি। এর পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি ভূমিকম্পের সময় মারাত্মক ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি নিয়মিত টাইফুন ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ও দেশটিকে বিপদে ফেলে। এসব কারণে বাসিন্দারা নিজেদের সুরক্ষায় মজবুত ঘরবাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
ইরান বহু বছর ধরেই বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সাক্ষী। দেশটির বিভিন্ন প্লেট সীমানা ও ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থান করায় এখানে ভূমিকম্পের হার খুবই বেশি। ১৯৯০ সালে গিলান প্রদেশে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডিগুলোর পরও ইরানিরা দেশে বসবাস চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার উপায় সম্পর্কে তারা ইতিমধ্যে জ্ঞান ও সচেতনতা অর্জন করেছে।
মোটিভেশনাল উক্তি