পাঁচ কোটি টাকা মেরে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন আরেক মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল। থানায় মামলা হলে তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু দেশ ছাড়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন প্রধান আসামি ইসমাইল।
হঠাৎ খবর আসে- দেশে ফিরছেন ইসমাইল। তাকে বহনকারী ফ্লাইট অবতরণ করবে ঢাকা বিমানবন্দরে। বিষয়টি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানিয়ে তাদের সহযোগিতা চায় চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানা পুলিশ।
এরপর যেই কথা, সেই কাজ; বিমানবন্দরে পৌঁছাতেই ইসমাইলকে নেয়া হয় পুলিশের কব্জায়। খবর পেয়ে ফ্লাইটে ঢাকায় ছুটে যান সদরঘাট থানার দুই কর্মকর্তা। ফ্লাইটেই তাকে ফিরিয়ে আনা হয় চট্টগ্রামে।
শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে ইসমাইলকে আটক করে ইমিগ্রেশন শাখার পুলিশ। পরে রাতে চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়।
শনিবার (২২ জুন) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সদরঘাট থানার ওসি ফেরদৌস জাহান।
গ্রেফতারকৃত ইসমাইল কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। সদরঘাট এলাকায় এন এন ফিশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
পুলিশ জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি তিন কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ এনে তিনজনের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় মামলা করেন মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিব। মামলাটির তদন্তে দেখা যায়- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সদরঘাট স্ট্যান্ড রোডের বিভিন্ন মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ কেনেন ইসমাইল। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন।
পরে ব্যবসায়ীরা ইসমাইলের কর্মচারী আল আমিন ওরফে নোমান ও ম্যানেজার কাউছার আহাম্মদ সাগরের কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে তারাও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ইসমাইলকে প্রধান আসামি করে সদরঘাট থানায় মামলা করা হয়। মামলার পর গত ৯ মে ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে দুই আসামি নোমান ও সাগরকে গ্রেফতার করা হয়।
সদরঘাট থানার ওসি ফেরদৌস জাহান বলেন, প্রতারণার শিকার মাছ ব্যবসায়ী হাবিবের করা মামলায় প্রধান আসামি ইসমাইলকে গ্রেফতার করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে আমরা তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসি। এরপর আদালতে পাঠানো হয়।
ওসি বলেন, মাছ ব্যবসায়ী হাবিবসহ কয়েকজনের পাঁচ কোটি টাকা মেরে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন ইসমাইল। পরিবারের অন্য সদস্যদের দুবাই নেয়ার জন্য দেশে এসেছিলেন তিনি। এ মামলায় আগেও দুজনকে আমরা গ্রেফতার করি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট থানার এসআই অর্ণব বড়ুয়া বলেন, ইসমাইল প্রথমে এক হাতে ব্যবসা করতেন। পরে শ্যালক নয়ন ও ভাগনে সাগরকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন। মাছ ব্যবসায়ীরা তাদেরকেই চিনতেন বেশি। ইসমাইল শুধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু পাঁচ মাছ বাকিতে কিনে দুবাই পালিয়ে যান তিনি। আমরা তাকে গ্রেফতারের জন্য ইমিগ্রেশনে আবেদন করেছিলাম।
কর্ণফুলী মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবু ইউছুফ বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন ইসমাইল। নোমান ও সাগর কমিশনের ভিত্তিতে তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। বিশ্বাসের ওপর তাদের কাছে মাছ বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিশ্বাস ভেঙে ব্যবসায়ীদের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যান ইসমাইল।